স্টাফ রিপোর্টার
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) এলাকায় গবাদিপশু জবাইয়ের জন্য নেই কোন কসাইখানা। কয়েক বছর পূর্বে নাসিকের একটি কসাইখানা থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ। ফলে শহরে যত্রতত্র ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই করছে মাংস বিক্রেতারা। কিন্তু এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নেই কোন তদারকি। ফলে পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘিতসহ জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে নগরবাসী।
তথ্যমতে বতর্মানে নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো মানসম্মত কসাইখানা নেই। তবে কয়েক বছর আগেও শহরের অক্টো অফিস এলাকায় সিটি করপোরেশনের মালিকাধীন একটি কসাইখানা ছিল। যেখানে নিয়মিত পশু জবাই করা হতো। তবে ৪ বছর পূর্বে কসাইখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে কোনো তদারকি ছাড়া শহরের মাংস ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র পশু জবাই করে যাচ্ছে। এতে নগরবাসী ব্রুসোলেসিস ও অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হওয়া সহ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
অথচ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র পশু জবাই বন্ধ করতে ‘পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১১’ অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণিত হলে অনূর্ধ্ব এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড বা ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা অথবা অনূর্ধ্ব ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। তবে এ আইনের প্রয়োগ করছে না কোনো সরকারি অধিদপ্তর বা সংস্থা।
শহরের প্রধান কাঁচাবাজার দিগুবাবুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারটিতে মোট ১২টি মাংস বিক্রির দোকান রয়েছে। যার মধ্যে ৬টি গরু-মহিষ এবং ৬টি খাসী-ভেড়ার বিক্রি করে। এসব দোকানীরা প্রতিদিন ব্যবসার জন্য প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া জবাই করে। বাজারের পাশ^বর্তী মসজিদের ইমাম মাসিক বেতনের বিনিময়ে এসব পশু জবাই করে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। তবে পশুর স্বাস্থ্য ও মাংসের মান নিশ্চিতের জন্য কোনো পশু চিকিৎসক উপস্থিত থাকেন না।
মাংস বিক্রেতা মো. রাসেল জানান, প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিদিন বিভিন্ন সময় পশু জবাই করেন তারা। বাজারের ১২টি দোকানের মধ্যে গরু-মহিষের মাংস বিক্রেতা ৬টি দোকানের জবাইয়ের জন্য আলাদা নিজস্ব ঘর রয়েছে। বাকি দোকানীরা তাদের দোকানে অথবা দোকানের সামনের রাস্তায় পশু জবাই করে থাকেন। জাবাই শেষে সৃষ্ট বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেয়া হয়। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরা তা নিয়ে যায়।
নিয়মানুযায়ী জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের স্যানেটারি বিভাগ গবাদি পশু জবাই কার্যক্রম দেখভাল করবে। তবে ভেনেটারি চিকিৎসক না থাকায় পশু জবাইয়ের পূর্বে পশুর স্বাস্থ্য ও মাংসের মান নিশ্চিত করতে পারে না সিটি করপোরেশন।
তদারকির বিষয়ে জানতে চাইলে নাসিক ফুড এন্ড স্যানিটেশন অফিসার মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বাজারে পশুর মান নিশ্চিত করা এবং ভেনেটারি চিকিৎসক দেয়ার কথা জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। সিটি করপোরেশনের একজন ভেনেটারি চিকিৎসক থাকার কথা তবে আমাদের কোনো ভেনেটারি চিকিৎসক নেই। তবে তদারকির দায়িত্ব আমাদের কিন্তু লোকবলের অভাবে আমরা নিয়মিত তদারকি করা সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ফারুক আহমেদের মুঠফোনে একাধিবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
এদিকে শহরের অক্টো অফিস এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে নাসিকের কসাইখানা খুজে পাওয়া যায়নি। সেখানে বর্তমানে হরিজন সম্প্রদারে ৫০টি পরিবারে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মজিদ সংবাদচর্চাকে বলেন, আগে এখানে কসাইখানা ছিল। কিন্তু অনেকদিন আগে ওইটা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে সেখানে কোয়াটার করা হয়। এখন সেখানে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে।
এ বিষয়ে নাসিক ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস বলেন, শহরের অক্টো অফিস এলাকায় সিটি করপোরেশনের একটি কসাইখানা ছিল। কিন্তু কসইখানাটি শহরের বাজাওে থেকে কিছুটা দূওে হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সেখানে গিয়ে পশু জবাই করতে অনিহা প্রকাশ অনেক ব্যবসায়ী। ধীরে ধীরে বাকি ব্যবসায়ীরাও কসাইখানা আসা কমিয়ে দেয়। ব্যবসায়ীদের অনিহার কারণে কসাইখানাটি অকেজো হয়ে পরে শেষে ৪ বছর আগে কসাইখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের বিষয়ে কাজ চলছে।
নাসিক প্রকেীশল বিভাগের সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে ১১ জুলাই আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা আকারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ওই সময় প্রকল্পটির বাজেট ধরা হয় ২৭৬ কোটি ৮৬ লাখ ৬৭৯টাকা।
নাসিক উপ সহকারী প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন (সিরাজী) বলেন, আমরা আধুনিক কসাইখানার একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্পটি বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো আমাদের কিছু জানান হয়নি।